দিনটি ছিল বুধবার । এশার নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়েছি । হয়ে পাশের গল্লিটা দিয়ে ধুকব।ঠিক তখনি চোখে পড়ল এক ১৮ বা ১৯ বছরের এক রিকশাওয়ালা । দেখেই কেমন জানি আনাড়ি লাগছিল । নতুন নতুন রিক্সা চালায় তা দেখেই ঠাহর করা যায় । রিক্সাটা থামতেই প্যাসেঞ্জার ( মহিলা) তার ভাড়া চুকিয়ে জেতেই ছেলেটি "Thank You" বলে উটল । মহিলাটি শুনেও কোন আমলে না নিলেও আমার মনে মনে অনেক কৌতূহল জাগল । কে সে , কি তার পরিচয় নানা কিছু । সহসা দু- একপা এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কবে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছ ? ছেলেটি বুজতে পারল সে যে প্রকৃত রিকশাওয়ালা না তা আমি বুজতে পেরেছি । অতঃপর -
ছেলেটি ঃ এইত ভাই ১ সপ্তাহ হয়েছে ময়মনসিং থেকে ঢাকায় এসেছি । ( খুবি শুদ্ধ ভাষায় )
আমি ঃ কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে তুমি ছাত্র ।। কিসে পড়া হয় ?
ছেলেটি ঃ জি হ্যাঁ আমি এবার HSC দিব ।
আমি ঃ তো এই লাইনে কেন ?
ছেলেটি ঃ আসলে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশান করার জন্য টাকার প্রয়োজন ,সেই টাকা যোগাতেই রিক্সা চালাই।
আমি ঃ টাকা যোগার হয়েছে ?
ছেলেটি ঃ হ্যাঁ মোটামুটি হয়ে গেছে , পরশুই গ্রামে ফিরে যাব ।
আমি ঃ ভাল মত পরীক্ষা দিয়ও । তুমিই পারবে ।
এই বলে মনে চাপা একটা কষ্ট নিয়ে আর কিছুই না বলতে পেরে হন হন করে হাটা শুরু করলাম । কিছু একটা ভুলেছি ভেবে ঘুরেই জিজ্ঞেস করলাম তোমার নামটা যেন কি ?
ছেলেটি হেসে বলল " আমার নাম সবুজ" ।
অনেক খানি আসার পর ভাবলাম কিছু টাকা দিয়ে তো একটু সাহায্য করতে পারতাম । যদিও পকেটে তেমন টাকা ছিল না । তারপর আবার ভাবলাম না এটা হয়ত তার জন্য অপমানজনক হত । যে ছেলে গ্রাম থেকে এসে তার লেখাপড়ার জন্য সঙ্কল্প বেধে মাঠে নেমেছে । এই কদিন কষ্ট করে এতগুল টাকা জগিয়েছে তার এই কঠোর মনবল আমি হয়ত ভাঙ্গতাম কিছু টাকা সাহায্যের মাধ্যমে ।
জানিনা আজ সে কেমন আছে ! হয়ত মুখে হাশি ফুটিয়েছে সারা গ্রামের । হয়ত কষ্টের ফসল আজ সে হাতে পেয়েছে কষ্টকে জয় করে ।