অনেকটা স্বপ্ন নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন বুনে ঢাকায় এসেছিলেন ফায়সাল। এরপর তার অক্লান্ত পরিশ্রমেই পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন পুরন করতে । নিজেকে তখন তার কাছে মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয় সুখী মানুষ। গ্রামের গরীব পরিবারটির মুখের হাসির একমাত্র কারন ছিল সেই ।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো । এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার পর তার কাছে পৃথিবীটা খুব সহজ মনে হতে লাগল । পড়ালেখার পাশাপাশি ঝোঁক দিল ঢাকা শহরের বিভিন্ন নামিদামি কোচিং সেন্টার গুলোতে । সেখানে তিনি ইংরেজি বিষয়ে ক্লাস নিতেন । জীবন চলছিল ঠিক ফুরফুরে মেজাজেই । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট করে বের হওয়ার পরেই আসবে একের পর এক চাকরির অফার । এসব ভাবতে ভাবতেই দিন যেত তার ।
এদিকে জীবনের তরীতে রঙ লাগাতে এল তার ভালবাসার মানুষটি । যেন এতদিন সে কোন এক কিছুর যে অজানা অভাববোধ করছিল তারই কোন প্রতিচ্ছবি ।এভাবে ভার্সিটি জীবন , কোচিং , আর ভালবাসার মানুষ নিয়ে পার হয়ে গেল ৪ টি বছর ।
সময় এসেছে এবার চাকরির বাজারে নামার পালা । প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার আগের রাতেই ফুল Confidence ছিল সে । চাকরি না দিয়ে কোথায় যাবে তারা । বিবিএ আর এম বিএ দুটিতেই তার ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট । ছাত্র হিসেবে খুবি মেধাবী । ছাত্র জীবন শুরু থেকেই সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে ।
যাই হোক প্রথম চাকরির ইন্টারভিউটা তার ভালই হয়েছিল । ভেবছিল চাকরিটা হয়ে যাবে । কিন্তু হলনা সেটা তখনও তাকে বলার মত বা বোঝানর মত কেউ ছিলনা । যাই হোক এভাবে সে এক এর পর এক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে থাকল । সব শেষের যে ইন্টারভিউটা সে দিতে গিয়েছিল ওইখানে তার ইন্টারভিউ performance
এর উপর আর কেউ ছিলনা । পুরপুরি নিশ্চিত সে পাবে এবার । সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয় ওই ছেলেটিও এসেছে ইন্টারভিউ দিতে । হাতে ব্র্যান্ড এর মোবাইল আর পোশাক দেখেই বোঝা যায় উচ্ছবংশের । যাই হোক ওই ছেলের রিটেন আর ভাইবা দুটোই তুলনামুলুকভাবে খারাপ হয়েছিল তবুও দেখে মনে হচ্ছিল খুবি Confidence । তখনও তার পরীক্ষা খারাপ হলে Confidence ফিরে আনার জন্য কোন অভিনব পদ্ধতি জানা ছিল না ।

যাই হোক সেখান থেকে বের হয়ে ফায়সাল এগিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল , তোমার পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পর ও Confidence দেখাচ্ছিল কেন ? উত্তরে সে বলল, কেন তুমি জাননা ? তুমিও আমার মত ২০ লক্ষ টাকা দাও তোমারও এই চাকরিটা হবে ।এই কথা শূনে ফায়সালের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । তার এতদিনের পরিশ্রম , এত ভাল রেজাল্ট সবি কি এই টাকার কাছে আজ হার মানবে ! আর এত টাকা সে পাবেইবা কোথায় ?
বাসে বসে বসে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন তিনি তার এক ছাত্রকে । এরপর চাকরির এই অবস্থা দেখে চিন্তা করল সে বিসিএস দিবে । তিন তিনবার বিসিএস দিয়েছে এই নিয়ে এখন ও ভাগ্য তার শাঁই দেয়নি ।
এই ফাল্গুনের কিছুদিন আগেই ভালবাসার মানুষটিও ছেড়ে চলে গেছে তাকে । মেয়েটারই বা কি দোষ! অনেক বছর তো বাসা থেকে সমস্ত বিয়ের জন্য আসা প্রস্তাব গুলো সে ইচ্ছে করে নাখজ করেছে এই ভেবে যে ফায়সালএর চাকরিটা এইত হয়ে যাবে তারপরি বিয়ে । কিন্তু সে আর হল কখন । তাই বাসায় ঠিক করা এক প্রস্তাবেই রাজি হয়েছে মেয়েটা ।
এখন আর কোন কিছুর ইচ্ছে নেই । সব স্বপ্ন আমার ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে ।এদিকে চাকরিতে আবেদন করার বয়সও ফুরিয়ে এল। এখন শুধু একটাই আশা আবার শেষ বারের মত বিসিএস দিব আর তা না হলে দেশের বাইরে যেয়ে কাজ করব ।