বিন্দু বিন্দু কিছু স্বপ্ন, মন ভরা
কিছু আশা বুকে ধারন করেই জীবন পথে এগিয়ে চলাটাই প্রত্যেকটা মানুষের কাম্য। কিন্তু
জীবন পথে সব বিভীষিকার দলদের দূর করতে সংগ্রাম করে টিকে থেকে স্বপ্নকে ছিনিয়ে আনতে
সক্ষম হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে। তেমনি আজ একজনের কথা আজ আপনাদের
বলতে যাচ্ছি ,যার হয়ত
আজ সন্ত্রাসী হবার কথা কিন্তু আজ তিনি
এক স্বনামধন্য প্রাইভেট ভার্সিটির একজন
উচ্চস্থ কোন এক মহান শিক্ষক।
তার নাম "বকুল সরদার"
( Privacy রক্ষার্থে
ছদ্ম নাম ব্যবহার হচ্ছে )। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবী। পড়ালেখার
পাশাপাশি বাবার সাথে করেছিলেন মাঠে চাষের কাজ। এভাবেই দিন কাটতে কাটতে কবে যে
চাকরি করার বয়স এসে পরল বুঝে উটতে পারেননি। যাই হোক মজার ব্যাপার হল চাকরি পাওয়ার
আগেই তিনি সেরে ফেলেছিলেন বিয়ের কাজ। এতে দায়িত্ব গেল আগের চেয়ে আরও হাজার গুন
বেড়ে। তাই দায়িত্ব আর কর্তব্য এর বেড়াজালে পড়ে বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় পাড়ি
জমালেন স্বপ্নের শহর অথবা জাদুর শহর এই ঢাকায় শুধু
মাত্র একটি চাকরির খোঁজে।
চাকরি পেতে তার বেশীদিন সময়
লাগেনি , আগেই
বলেছি তিনি ছিলেন মেধাবী শুধু বইয়ের জ্ঞান দ্বারা যা সমৃদ্ধ নয়। যাই
হোক প্রথম মাসটা তাঁর ভালোয় ভালোয় কেটে যেতে লাগল এইভেবে যে, মাস শেষে জীবনের প্রথম বেতন আর সেই
বেতন দিয়েই বাবা, মা , ভাই , বোনদের জন্য কিনবেন হরেক
রকমের পণ্য। খারাপ ঘটনাটা ঘটল যেদিন তিনি
বেতন পেলেন। আসলে মানুষের বেশিরভাগ খারাপ ব্যাপারগুলো আনন্দের মুহূর্তের পরেই ঘটে
আর যার জন্য সুখ আছে বলেই আমরা দুঃখের মর্যাদা বুঝি।
দিনটি ছিল এক উজ্জ্বল
রৌদ্রময় বিকাল। প্রথম মাসের সেলারি পেয়ে মনের খুশিতে তিনি অফিসের সামনের রাস্তা
দিয়ে তাঁর হাজার জল্পনা কল্পনা বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় এগিয়ে চলেছেন। হঠাৎ করেই
পিছন থেকে কারা যেন ডেকে বলল "এই ছেলে এখানে আস"।
অনেকটা সংকোচিত হয়েই তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন " আমাকে ডাকছেন ভাই? "
জ্বি আপনাকেই
ডেকেছি। কাছে যেতেই
তাঁকে ঘিরে ধরল সেই যুবকের দল। কার কারও পকেট থেকে বের হল কয়েকটি চকচকে ছুরি । বুঝতে আর বাকি রইলনা তিনি
কাদের খপ্পরে পরেছেন। তবুও শেষ চেষ্টা তো সবাই করে তাই তিনিও করলেন। মিনতি করে
তাদের বললেন, দেখেন আজ আমার চাকরির জীবনের প্রথম মাসের টাকা পেয়েছি।এই টাকা দিয়ে
আমি আমার মা, বাবার
জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাব , কিন্তু নিষ্ঠুরের
মনে কি কখনও আর ভালবাসা জন্মে ?
তারা শুধু তার মানিব্যাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ রেখেই তা ফিরত দিল।
সামনেই একটা পুলিশ দাড়িয়ে
ছিল। তিনি উনার কাছে গিয়ে নালিশ করলেন কিন্তু সেই পুলিশও উলটো উনাকে বলতে লাগল,"আপনি যত
তারাতারি পারেন এখান থেকে কেটে পরুন , নইলে আপনার সমস্যা হবে। ওরা আপনাকে ফলো করছে। পুলিশের মুখে এই কথা
শুনে যেটুকু আশার আলো ছিল তাও ডুবে গেল।
যাই হোক তিনি সেইদিনি
গ্রামে ফিরে যান এবং সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর চকারি করবেন না, তিনি অনেক বড় মাপের একজন
সন্ত্রাসী হবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি তার গ্রামের কিছু বন্ধুদের ডাকলেন যারা
ছিল তখনও বেকার । বন্ধুর মুখে এই করুন ঘটনা
শুনে তারাও রাজি সন্ত্রাস করবে বলে পাশাপাশি উনি উনার বন্ধুদেরও একটা মাসিক
আনুমানিক আয় দেখিয়েছিলেন যেটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারা পাবে।এতে সবাই খুশি
মনে রাজি হয়ে গেল।
রাজি তো হল সবাই কিন্তু এই
কাজের জন্য যে চাই এক সুবিশাল পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত নিলেন
তারা সব বেছে বেছে বড় লোকদের কাছে টাকা নিবেন এবং সেই টাকা থেকে তারা কিছু সামাজিক
উন্নয়নেও কাজ করবেন। প্লান সাকসেসফুল , কাল থেকেই হবে এর যাত্রা।
সব কিছুর পরিকল্পনা যখন শেষ
তখন বকুল সরদারের মামার কানে কোন ভাবে এই বিষয়টা চলে যায়। মামা এই কথা শোনার পর
এমন মারা মারল যা কখনো ভুলার মত ছিলনা। কিন্তু বকুল সরদার যে নাছোড় বান্দা। এত মার
খাওয়ার পরেও তিনি দৃঢ় সঙ্কল্প যে তিনি মাস্তান হবেনই। এরপর পরিবারের সদস্যরা
বুঝলেন মেরে লাভ নেই জানতে হবে আসল ব্যাপারটা " যে কেন সে মাস্তান হতে চায়
"।
এরপর বকুল সরদার সব ঘটনা
তাদের কাছে খুলে বললেন। কিন্তু এই ঘটনা শুনে যে লোকে এমন অনুভূতি প্রকাশ করবে তা বকুল সরদার সপ্নেও ভাবেননি। এখন মামা বলে উঠলো আচ্ছা তোর টাকা নিয়েছে বলেই তো
তোর এই পাগলামি, যা আমি তোকে ৫০,০০০ দিয়ে
দিব। ঐদিকে শাশুড়ি বলে উটলো তিনিও তার মেয়ের জামাইকে ১ লক্ষ টাকা দিতে চান ।তিনি
ভাবলেন এত টাকা এভাবে খরচ করে কি লাভ! তাই সবার কাছের উপহারের টাকা আর বাসা থেকে
কিছু টাকা ভরে রওনা দিলেন সুদূর বেলজিয়াম পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে। এরপর দেশে ফিরে
তিনি এখন এক স্বনামধন্য প্রাইভেট ভার্সিটির একজন উচ্চ পর্যায়ের নিয়োজিত সম্মানিত
একজন মহান শিক্ষক।
পরিশেষে, মানুষের ভাগ্য, ভবিষ্যৎ সব তাঁর ( উপর
ওয়ালা) হাতে। সন্ত্রাসী হবার কথা কিন্তু আজ তিনি
শিক্ষক। কখন যে কার জীবনে কোন
কারণের সূত্রপাত ধরে পরিবর্তন
আসবে তা এই পৃথিবীর কেউ বলতে পারবেনা । তাই স্বপ্নকে লালন করতে শিখুন , জীবনের "Turning
Point" টা আসবেই ।
ধন্যবাদ-
Written By : Aminul Islam